এবার ৩২ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে দিল ফেসিয়াল রিকগনিশন

এই ফেসিয়াল রিকগনিশন চেহারার মাধ্যমে মানুষকে সনাক্ত করতে কাজ করে।ফেসিয়াল রিকগনিশন বা চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তিটি দিন দিন অনেক‌ উন্নত হয়ে যাচ্ছে।এই প্রযুক্তিটিতে মূলত  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদমগুলো মানুষের ইমোশন রিকগনিশনের হিসেবে কাজ করে। অত্যন্ত উন্নত একটি প্রযুক্তি। 

এবার ৩২ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে দিল ফেসিয়াল রিকগনিশন

এর মাধ্যমে কোন স্থিরচিত্র বা ভিডিও হতে কোন মানুষের ফেইস চিহ্নিত করা যায়। এই ফেসিয়াল রিকগনিশনে ব্যবহার করা হয় বায়োমেট্রিকস । এই বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করার ফলে মানুষের মুখের মানচিত্র ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা যায়। অতঃপর এই সিস্টেমটি‌ তার ডেটাবেজে থাকা রেকর্ডকৃত সকল মুখের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে কোন মুখটির সঙ্গে ওই মুখটির মিল রয়েছে।

বায়োমেট্রিক্স এর মাধ্যমে মূলত তিন ভাবে ব্যক্তির শারীরিক কোনো চিহ্ন হতে তার পরিচয় বের করা যায় । এর মধ্যে প্রধান হল ফেসিয়াল রিকগনিশন ।সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি এটি ।

ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সাল এরমধ্যে এর মূল্য দাঁড়াবে  ৭.৭ বিলিয়ন ডলারে। এর কারণ হলো দুইটা।প্রথমটি হলো নানা ধরনের অর্থনৈতিক  কাঠামোতে এর  ব্যবহার সম্ভব। আর দ্বিতীয় টি হল পরিচয় শনাক্তকরণের সবচেয়ে জনপ্রিয়তম পদ্ধতি টি হলো ফেসিয়াল রিকগনিশন; এটি হলো তুলনামুলক সহজ এবং ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি। 

এই চেহারা সনাক্তকরণ পদ্ধতিটির অ্যাপে রয়েছে কয়েকটা  উন্নতমানের ক্যামেরা, এই ক্যামেরাগুলো মানুষের দাঁড়ানো বা হাঁটা  অবস্থায় ছবি তুলে রাখে। এছাড়াও সেখানে থাকে বাস্তবধর্মী বকা ব্যবহারিক সফটওয়্যার, এরা এই ছবিগুলোকে নিয়ে কাজ করে। তারা মিলানোর চেষ্টা করে ডাটাবেজে সংরক্ষিত ছবিগুলোর সাথে কোন ব্যক্তির মুখের মিল রয়েছে।

 ফেসিয়াল রিকগনিশনের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। প্রয়োগ এবং উৎপাদকের ওপর নির্ভর করে এগুলো। প্রায় সকল পদ্ধতিতেই  কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো:

ডিটেকশন

এখানে একটি  ফেসিয়াল রিকগনশন সিস্টেমকে অপর একটি ভিডিও সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম এর সঙ্গে যোগ করা হয়। ফেসিয়াল রিকগনশন সফটওয়ারটি তখন পুরা ক্যামেরার ভিডিও কে স্ক্যান করে। প্রতিটি মুখ সদৃশ ছবি চিহ্নিত করা হয়। তারপর ওই ছবিগুলোকে আবার সিস্টেমের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয় আরও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য। 

সিস্টেমটি তখন হিসাব করে মাথার অবস্থান,কৌণিক আকৃতি, দৈর্ঘ্য প্রস্থ ইত্যাদি ব্যাপার গুলো। নিখুঁতভাবে মুখকে সনাক্ত করতে হলে  ৩৫ ডিগ্রি কোণে ক্যামেরার দিকে ঘুরে থাকতে হয় মুখকে ।

নরমালাইজেশন

 ব্যক্তির মুখের তোলা ছবিকে  স্কেল সেই সাথে রোটেশন দ্ধারা একটি সাধারণ ছবির অনুরূপ করা হয়। এটিকে বলে নরমালাইজেশন। অতঃপর মুখের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। 

দুটি চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, ঠোঁটের পুরুত্ব, চোয়াল এবং কপালের মাঝখানের দূরত্ব ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক সূক্ষ্ম বিষয় এখানে পর্যবেক্ষণ করা হয়।কিছু কিছু অনেক উন্নত সিস্টেম রয়েছে যারা এরকম শত শত ফ্যাক্টর নিয়ে কাজ করে। সর্বশেষে যে‌ প্রান্তে পৌঁছানো হয়, সেটিকে বলা হয় ফেসিয়াল সিগনেচার।

রিপ্রেজেন্টেশন: ফেসিয়াল সিগনেচার এরপর সিস্টেমটি একে একটি ইউনিকোডে কনভার্ট করে ফেলে । এটির ফলে যাচাইকরণ প্রক্রিয়াটি  সহজ হয়ে যায়। যাচাই বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে নতুন প্রাপ্ত ফেসিয়াল ডেটাগুলো সাথে ডেটাবেজে সংরক্ষিত ডাটাগুলোর সাথে তুলনা করে দেখা যে কোনোটির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কি না।

ম্যাচিং: ম্যাচিং হলো এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির শেষ ধাপ। এই ধাপটিতে প্রাপ্ত ডাটাগুলো সঙ্গে ডেটাবেজে সংরক্ষিত ডাটাগুলোর তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এখানে যদি কোনো মিল পাওয়া তবে সফটওয়ারটি তখন পূর্ববর্তী ছবির যাবতীয় তথ্য বের করে এবং সেগুলোকে অপারেটরের সামনে এনে দেয়।

এই ফেসিয়াল রিগকনিশন সফটওয়্যারটির সহায়তায় ৩২ বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া চীনের  একটি ছেলেকে ফিরে পেয়েছে  তার পরিবার। ছেলেটির নাম ছিল মাও ইয়িন । এই  মাও ইয়িন তিন দশকেরও বেশি সময় আগে অপহরণ হয়েছিল।মাও  ইয়িন কে তার দুই বছর বয়সে অপহরণ করা হয়। চীনের মধ্য শানসি প্রদেশের শি’আনের একটি হোটেলের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ১৯৮৮ সালে এই ঘটনাটি ঘটে।ইয়িনকে বিক্রি করে দেয়া হয় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। সে সেখানে তাদের কাছে বড় হতে থাকে। এই খবরটি জানিয়েছেন 

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি ।

পুলিশ জানিয়েছিল , মাও ইয়িনের ছোটবেলার ছবি কে ‘বয়স্ক’ করে জাতীয় ডেটাবেজের সার্ভারে দেয়া হয়েছিল এবং সাথে সাথে অন্য একটি ছবির সঙ্গে তাঁর মুখের মিল চলে আসে।

পরবর্তীতে সে তার নিজের মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে সক্ষম হন। তার পরিবারও তাকে ফিরে পেতে এতদিনেও সন্ধান বন্ধ করেনি।মাও ইয়িনের মা লি জিঙ্গজি এই কারণে তার চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল।চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে মাও ইয়িনের মা জানিয়েছিলেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পথে পথে এক লাখেরও বেশি লিফলেট বিলি করেছিলেন এবং কয়েকটি টিভি চ্যানেলেও গিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন… এখন থেকে উড়ে উড়ে ডাক্তার পৌঁছাতে পারবে রোগীর কাছে, গল্প নয় সত্যি

মাও ইয়িনের মা আরো জানিয়েছেন আগের বছরের এপ্রিল মাসে একটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পেরেছিল ১৯৮০ সালের পরে সিচুয়ান প্রদেশের এক লোক শানক্সি থেকে একটি ছেলেকে নিয়ে এসেছিল। তারপর মাও ইয়িনকে ট্র্যাক করা হয় এবং তখন তার ছোটবেলার ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মাও ইয়িনকে যারা কিনে নিয়েছিল তারা তার নাম রেখেছিল গু নিঙ্গনিন।মাও ইয়িন এই ব্যাপারটি জানত না। শিয়ান পুলিশ মাও ইয়িনকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার সময় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে দেখা যায় কনফারেন্স রুমের দরজা দিয়ে  মাও ইয়িন তার পরিবারের কাছে দৌড়ে যাচ্ছে। তখন তার মা তাকে বলে সে আর কখনো তাকে হারাতে দিবেনা। চীন সরকারের জাতীয় ডেটাবেজে সব নাগরিকের এরকমন বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষন করা রয়েছে।

Leave a Comment